বিষয়ঃ গণিত–১ (Mathematics – 1)
অধ্যায়ঃ নবম অধ্যায় (Chapter – 9)
কোর্সঃ মেকানিক্যাল টেকনোলজি (Mechanical Technology)
সেমিস্টারঃ ১ম সেমিস্টার (1st Semester)
সূচনা (Introduction)
ত্রিকোণমিতিতে কোণ একটি মৌলিক উপাদান। সাধারণত আমরা একক কোণের ত্রিকোণমিতিক অনুপাত যেমন – sin A, cos A, tan A ইত্যাদি শিখে থাকি।
কিন্তু বাস্তব জীবনে ও প্রকৌশল গণনায় এমন অনেক ক্ষেত্র দেখা যায় যেখানে দুই বা ততোধিক কোণের সমষ্টি বা ব্যবধান একত্রে আসে।
এই ধরনের কোণকেই বলা হয় যৌগিক বা মিশ্র কোণ (Compound Angle)।
অর্থাৎ,
যদি A এবং B দুটি কোণ হয়, তবে (A + B), (A – B), (A + C), (A – C) ইত্যাদি কোণগুলো যৌগিক কোণ।
এই অধ্যায়ে আমরা যৌগিক কোণের ত্রিকোণমিতিক অনুপাত যেমন sin(A + B), cos(A + B), tan(A + B) প্রভৃতি নির্ণয় করব, যা পরবর্তীতে প্রকৌশলীয় বিশ্লেষণ, বলের সমাবেশ, কম্পন, তরঙ্গ, বিদ্যুৎ প্রকৌশল ইত্যাদি বিষয়ে ব্যবহৃত হয়।
যৌগিক কোণের ধারণা (Concept of Compound Angles)
যৌগিক কোণ বলতে বোঝায় —
এমন একটি কোণ যা দুই বা ততোধিক পৃথক কোণের বীজগাণিতিক যোগ বা বিয়োগ দ্বারা গঠিত।
উদাহরণস্বরূপ,
-
(A + B) → দুটি কোণের সমষ্টি দ্বারা গঠিত যৌগিক কোণ
-
(A – B) → দুটি কোণের ব্যবধান দ্বারা গঠিত যৌগিক কোণ
উপপাদ্য ১ (Theorem 1)
প্রমাণ করতে হবে:
sin(A+B)=sinAcosB+cosAsinB\sin(A + B) = \sin A \cos B + \cos A \sin B cos(A+B)=cosAcosB−sinAsinB\cos(A + B) = \cos A \cos B – \sin A \sin B
অঙ্কন ব্যাখ্যা (Geometrical Construction)
মনে করি, একটি ঘূর্ণনশীল সরলরেখা OX→ বিন্দু O কে কেন্দ্র করে ঘড়ির কাঁটার বিপরীত দিকে ঘুরে OY→ অবস্থানে আসে এবং একটি ∠XOY = A সূক্ষকোণ তৈরি করে।
এরপর একই দিকেই আবার রেখাটি ঘুরে OZ→ অবস্থানে আসে, ফলে ∠YOZ = B সূক্ষকোণ উৎপন্ন করে।
তাহলে পুরো কোণটি হবে,
∠XOZ=A+B∠XOZ = A + B
যদি A+B<90°A + B < 90°, তাহলে এটি একটি সূক্ষকোণ।
এখন, যৌগিক কোণ (A + B) এর জন্য আমরা sin(A + B) এবং cos(A + B) এর মান নির্ণয় করব।
প্রমাণ (Proof)
অঙ্কন অনুসারে, OZ রেখার ওপর যেকোনো বিন্দু P নেওয়া হলো।
P থেকে OX রেখার ওপর লম্ব টানলে আমরা পাই, PQ লম্বটি।
R বিন্দু থেকে PQ এবং OX এর ওপর যথাক্রমে RS এবং RT লম্ব টানা হলো।
এখন আমরা নিচের সম্পর্কগুলো ব্যবহার করবঃ
সমকোণী ত্রিভুজের গুণাবলীর মাধ্যমে,
sin(A+B)=PQOP\sin(A + B) = \frac{PQ}{OP}
এখন,
PQ=PT+TQPQ = PT + TQ TQ=RSTQ = RS
অতএব,
sin(A+B)=PTOP+RSOP\sin(A + B) = \frac{PT}{OP} + \frac{RS}{OP}
এখন,
PTOP=PTPR×PROP=cosAsinB\frac{PT}{OP} = \frac{PT}{PR} \times \frac{PR}{OP} = \cos A \sin B
এবং
RSOP=RSOR×OROP=sinAcosB\frac{RS}{OP} = \frac{RS}{OR} \times \frac{OR}{OP} = \sin A \cos B
তাহলে,
sin(A+B)=sinAcosB+cosAsinB\sin(A + B) = \sin A \cos B + \cos A \sin B
একইভাবে,
cos(A+B)=OQOP=OR−RQOP\cos(A + B) = \frac{OQ}{OP} = \frac{OR – RQ}{OP}
এবং যথাক্রমে রাশি বসালে পাওয়া যায়,
cos(A+B)=cosAcosB−sinAsinB\cos(A + B) = \cos A \cos B – \sin A \sin B
এতেই উপপাদ্যটি প্রমাণিত।
উপপাদ্য ২ (Theorem 2)
যৌগিক কোণের পার্থক্য সূত্র (Difference Formula)
একইভাবে প্রমাণ করা যায় যে –
sin(A−B)=sinAcosB−cosAsinB\sin(A – B) = \sin A \cos B – \cos A \sin B cos(A−B)=cosAcosB+sinAsinB\cos(A – B) = \cos A \cos B + \sin A \sin B
অন্যান্য ত্রিকোণমিতিক অনুপাত
(১) ট্যানজেন্টের সূত্রঃ
tan(A+B)=tanA+tanB1−tanAtanB\tan(A + B) = \frac{\tan A + \tan B}{1 – \tan A \tan B} tan(A−B)=tanA−tanB1+tanAtanB\tan(A – B) = \frac{\tan A – \tan B}{1 + \tan A \tan B}
(২) কটাঞ্জেন্টের সূত্রঃ
cot(A+B)=cotAcotB−1cotB+cotA\cot(A + B) = \frac{\cot A \cot B – 1}{\cot B + \cot A} cot(A−B)=cotAcotB+1cotB−cotA\cot(A – B) = \frac{\cot A \cot B + 1}{\cot B – \cot A}
উদাহরণ (Example)
প্রশ্ন: যদি A = 30° এবং B = 45°, তবে sin(A + B) এর মান নির্ণয় করুন।
সমাধান:
sin(A+B)=sin30°cos45°+cos30°sin45°\sin(A + B) = \sin 30° \cos 45° + \cos 30° \sin 45° =(12)×(12)+(32)×(12)= \left(\frac{1}{2}\right) \times \left(\frac{1}{\sqrt{2}}\right) + \left(\frac{\sqrt{3}}{2}\right) \times \left(\frac{1}{\sqrt{2}}\right) =1+322= \frac{1 + \sqrt{3}}{2\sqrt{2}}
যৌগিক কোণের প্রয়োগ (Applications of Compound Angle Formulas)
যৌগিক কোণের সূত্রগুলো প্রকৌশল, পদার্থবিজ্ঞান ও স্থাপত্যে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়। যেমনঃ
-
যান্ত্রিক প্রকৌশলে (Mechanical Engineering): বলের ফলন্ত (Resultant Force) নির্ণয়ে
-
বৈদ্যুতিক প্রকৌশলে (Electrical Engineering): AC current ও voltage এর পর্যায় পার্থক্য নির্ণয়ে
-
স্থাপত্য ও নির্মাণকাজে: ঢালু কাঠামোর উচ্চতা বা দৈর্ঘ্য নির্ণয়ে
-
তরঙ্গ ও কম্পনে: দুটি তরঙ্গের মিলন (Interference) বিশ্লেষণে
যৌগিক কোণের ত্রিকোণমিতিক অনুপাত হলো ত্রিকোণমিতির অন্যতম মৌলিক ভিত্তি।
এই সূত্রগুলো না জানলে প্রকৌশল ও পদার্থবিজ্ঞানের অনেক জটিল সমস্যা সমাধান করা সম্ভব নয়।
সুতরাং, sin(A + B), cos(A + B), এবং tan(A + B) এর সূত্রগুলো শুধু মুখস্থ নয়, বরং এর প্রমাণ ও ব্যবহারিক ব্যাখ্যা ভালোভাবে জানা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

যৌগিক কোণের ত্রিকোণমিতিক অনুপাত নিয়ে বিস্তারিত ঃ